নিউজ ডেস্ক :: উখিয়া-টেকনাফে অবৈধভাবে বসবাসকারী আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা নাগরিকের চলাফেরা, তাদের আয়ের উৎস্যসহ দৈনন্দিন কার্যপ্রণালীর উপর সরকারি কোনো নজরদারি বা নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তারা বেপরোয়া জীবন যাপনে অব্যস্ত হয়ে পড়েছে। অধিকাংশ রোহিঙ্গা চোরাচালান, মাদক ও মানবপাচার কাজে জড়িয়ে পড়েছে। অসামাজিক, অনৈতিক কর্মকাণ্ড অত্যাধিক হারে বেড়ে যাওয়ায় তা স’ানীয় সামাজিক জীবনযাপনের উপর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে দাবি করে রোহিঙ্গাদের স’ানান্তর প্রক্রিয়া দ্রুত সম্পন্ন অথবা বস্তি এলাকা কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখার দাবি উঠেছে।
১৯৯১ সালে কক্সবাজার জেলার বিভিন্ন সীমান্ত এলাকা দিয়ে প্রায় আড়াই লক্ষাধিক রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করে। জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে এসব রোহিঙ্গাদের খাদ্য, মানবিক সেবা দিয়ে উখিয়া-টেকনাফ ও রামু বিভিন্ন স’ানে শরণার্থী মর্যাদা দিয়ে আশ্রয় দেয়। পরবর্তীতে বাংলাদেশ মায়ানমার কূটনীতিক তৎপরতার মাধ্যমে মায়ানমার সরকার রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে সম্মত হলে শুরু হয় প্রত্যাবাসন কার্যক্রম। এসময় বেশির ভাগ রোহিঙ্গা মায়ানমারে চলে যাওয়ার এক পর্যায়ে ২০০৪ সালে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া বন্ধ হয়ে যায়। এসময় উখিয়ার কুতুপালং শরণার্থী ক্যাম্পে ১১ হাজার ও টেকনাফের নয়াপাড়া শরণার্থী ক্যাম্পে ৩১ হাজার রোহিঙ্গা রয়ে যায়। আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস’া এসব রোহিঙ্গাদের বর্তমানেও খাদ্য ও মানবিক সেবা দিচ্ছে।
২০১০ সালে সেপ্টেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে সীমান্তের নাফনদী অতিক্রম করে প্রায় অর্ধ লক্ষ রোহিঙ্গা উখিয়ার কুতুপালং ও লক্ষাধিক রোহিঙ্গা টেকনাফের লেদা ও মুছনিতে আশ্রয় নেয়। এসময় দায়িত্বশীল তৎকালীন জেলা প্রশাসক জয়নুল বারী বিজিবি, পুলিশ ও বনকর্মীদের সহযোগিতায় অনুপ্রবেশকারী এসব রোহিঙ্গাদের মায়ানমারে ফেরত পাঠাতে ব্যর্থ হয়। পরে জেলা প্রশাসক এসব রোহিঙ্গাদের কোন প্রকার সাহায্য সহযোগিতা না করার জন্য স’ানীয় এনজিও গুলোর প্রতি নির্দেশ প্রদান করেন। জীবন জীবিকার তাগিদে এসব রোহিঙ্গারা জড়িয়ে পড়ে নানা অপকর্ম ও অপরাধ প্রবণতায়। এমনকি তারা বনভূমি দখল করে মোটা অংকের টাকায় হস্তান্তর করার একাধিক অভিযোগ উঠেছে।
সামপ্রতিক সময়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা চট্টগ্রাম সফরে এসে চট্টগ্রাম বিভাগীয় কমিশনারকে নির্দেশ দেন কক্সবাজার থেকে নোয়াখালীর সুবর্ণচর ও হাতিয়ায় রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্প স’ানান্তর করার জন্য। সে ফলশ্রুতিতে হাতিয়ার ঠেঙ্গারচর, বদনার চর ও জাগলার চরে প্রায় ৫০০ একর জমি ইতিপূর্বে রোহিঙ্গা শরণার্থী ক্যাম্পের জন্য চিহ্নিত করা হয়েছে। অজ্ঞাত কারণবশত রোহিঙ্গা স’ানান্তর প্রক্রিয়া বিলম্বিত হওয়ায় এসব রোহিঙ্গারা আরো বেপরোয়া হয়ে উঠে। সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) উখিয়া শাখার সভাপতি নুর মোহাম্মদ সিকদার জানান, এসব রোহিঙ্গাদের কারণে উখিয়ার প্রায় আড়াই লক্ষাধিক নাগরিক জীবনের উপর সার্বিক ক্ষেত্রে বিরূপ প্রভাব পড়েছে। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বস্তি থেকে মাদকের বিস্তৃত হচ্ছে। এদের কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে নিয়ন্ত্রণে রাখা খুবই জরুরি হয়ে পড়েছে বলে তিনি দাবি করেন।
কুতুপালং গ্রামের বাসিন্দা উপজেলার শীর্ষ স’ানীয় আওয়ামী লীগ নেতা নুরুল হক জানান, এসব রোহিঙ্গারা গ্রামের মানুষের সাথে মিশে যাওয়ার কারণে পুরো উখিয়া উপজেলার নাগরিক জীবনে এক অস্বস্তিকর পরিবেশের সৃষ্টি হয়েছে। তাই এসব রোহিঙ্গাদের সীমাবদ্ধতার গণ্ডিতে আবদ্ধ রেখে আইন প্রয়োগকারী সংস’ার নজরদারিতে রাখা প্রয়োজন বলে তিনি দাবি করেন। রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন সংগ্রাম পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যক্ষ হামিদুল হক চৌধুরী জানান, নিয়ন্ত্রণহীন এসব রোহিঙ্গাদের চলাফেলার ওপর কোন বাধ্যবাধকতা না থাকায় তারা যেকোন অপরাধ প্রবণতায় জড়িয়ে পড়তে দ্বিধাবোধ করছে না। তিনি বলেন, রোহিঙ্গা বস্তিটি কাঁটাতারের বেড়া দিয়ে আইন প্রয়োগকারী সংস’া কর্তৃক নিয়ন্ত্রণ করা হলে স’ানীয় গ্রামবাসীরা স্বাভাবিক জীবন যাপনের একটি সুন্দর পরিবেশ ফিরে আসবে।
উপজেলা বন রেঞ্জ কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম জানান, এসব রোহিঙ্গাদের সরকারি ভাবে নিয়ন্ত্রণ না থাকায় তাদের খেয়াল খুশি মত বনভূমি জবর দখল করে রাতারাতি স’াপনা তৈরি করছে। তিনি বলেন, সম্প্রতি সহকারি কমিশনার (ভূমি) নুরুদ্দিন মোহাম্মদ শিবলী নোমানের নেতৃত্বে পুলিশ বনকর্মীরা অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমাণ অবৈধ স’াপনা উচ্ছেদ করেন।
পাঠকের মতামত: